কাজীরহাট/রাখালগাছী-আরিচা ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য স্থান পরিদর্শন
অন-লাইন ডেস্ক: এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে কাজীরহাট-পাটুরিয়া নৌরুটের কাজীরহাট ফেরিঘাট। গুরুত্বপূর্ণ এই ফেরিঘাট দ্রুত চালুর জন্য বার বার আশ্বাস দিয়েছেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আমলারা। গত আট বছরে অন্তত তিনবার ফেরিঘাট চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান স্বয়ং। অথচ ঘাট চালু হওয়ার কোনো লক্ষণই ছিল না। এদিকে কর্মসংস্থান হারিয়ে হতাশ এলাকার ব্যবসায়ী, পরিবহন চালকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।জানা গেছে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকা জেলার প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান পাবনা জেলার আমিনপুর থানাধীন মাসুমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মিরোজ হোসেন-এর সহযোগিতায় ফেরিঘাটের জন্য রাখালগাছী নামক স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। আরিচা-রাখালগাছী ফেরিঘাট আগামী ঈদ-উল-ফিতরের আগেই সম্পন্ন করার লক্ষে কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যেই প্রকল্পটি পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। নতুন ফেরিঘাট পরিদর্শনের সময় প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান-এর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ রোড এন্ড হাইওয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারী আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।নতুন ফেরিঘাট সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরোজ হোসেন বলেন- আরিচা-রাখালগাছী ফেরি চলাচল শুরু হলে ঈদসহ নানা সময়ে যাত্রাপথে ভোগান্তির অবসান, দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, যমুনা সেতুর ওপরে চাপ এবং যানজট কমানোসহ মানুষের সুখকর যাত্রা নিশ্চিত হবে এবং স্বল্প সময়ে মাত্র ২০-২৫ মিনিটে ফেরির মাধ্যমে নদী পারাপার করতে পারবে।এদিকে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি এবং তার পরের বছর পাবনায় এসে কাজীরহাট ফেরিঘাট চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৃতীয়বারের মতো একই আশ্বাস দেন তিনি। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারও একাধিকবার ফেরিঘাট চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কাজীরহাটে এসে ফেরি চালুর তারিখ পর্যন্তও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরও ঘাটটি স্থায়ীভাবে চালু হয়নি। মাঝে দুবার সপ্তাহখানেকের জন্য চালু হলেও ফেরিস্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ঘাটটি।যমুনার পশ্চিম পাড়ে পাবনার বেড়া উপজেলার কাজীরহাট এবং পূর্ব পাড়ে মানিকগঞ্জের আরিচা/পাটুরিয়া। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলেও ১৫০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে এ রুটে ফেরি চলাচল অব্যাহত ছিল। পাবনা জেলার বেশ কয়েকজন ট্রাকচালক জানান, যমুনা সেতুর তুলনায় কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে ট্রিপপ্রতি প্রায় ২-৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। এছাড়া দূরপাল্লার ট্রাকচালকরা ফেরিতে বিশ্রামের সুযোগও পান, যা বঙ্গবন্ধু সেতুতে সম্ভব হয় না। এ কারণ ছাড়াও উত্তরবঙ্গে বেশিরভাগ লোকজন এবং ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা এই নৌরুটে ফেরি চালুর ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী।মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজীরহাটের সন্নিকটে রাখালগাছী/নরাদহ রুটের দূরত্ব হবে প্রায় ৪ কিলোমিটার। রুটটি চালু করা হলে ফেরি সেক্টরের আয় বৃদ্ধির পাশাপশি উত্তরাঞ্চলে যাত্রী ও চলাচলে সময় এবং জ্বালানী সাশ্রয় হবে। অতিতে রুটের ফেরি সার্ভিস থেকে সংস্থা বেশ লাভবান হলে ১৯৯৭ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর এ রুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ ঘোষনা করা হয়। এরুটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর যানবাহনের বাড়তি চাপ কমার পাশাপাশি দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত।- ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই বন্যার কারণে কাজীরহাট-পাটুরিয়ার মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েক জেলায় পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক বেড়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়েন উভয় পাড়ের পণ্যবাহী শত শত ট্রাকচালক। পরিবহন ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে ট্রাক মালিক-শ্রমিকরা স্বল্প খরচে মালামাল পরিবহনের স্বার্থে এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ কমাতে এই নৌরুটে ফেরি চালুর জন্য অব্যাহতভাবে দাবি জানিয়ে আসছেন।
Loading